না ফেরার দেশে অভিনেতা আবদুল কাদের
ক্যানসারের কাছে হার মানলেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুল কাদের। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সময় নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার পুত্রবধূ জাহিদা ইসলাম জেমি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জেমি বলেন, ‘বাবা আর নেই।
তার জন্য দোয়া করবেন।’ মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে এবং অসংখ্য ভক্ত রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শোবিজ অঙ্গনে। অভিনেতার আত্মার শান্তি কামনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
প্যানক্রিয়াসের ক্যানসারে ভুগছিলেন আবদুল কাদের। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৮ ডিসেম্বর চেন্নাইতে নেওয়া হয় তাকে। সেখানকার হাসপাতালে পরীক্ষার পর ১৫ ডিসেম্বর তার ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, আবদুল কাদেরের অবস্থা সংকটাপন্ন, ক্যানসার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়নি। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলে রোববার (২০ ডিসেম্বর) দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার পর আবদুল কাদেরের করোনা পরীক্ষা করা হলে পজেটিভ আসে।
তখন তাকে করোনা ইউনিটে রাখা হয়। এরপর এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকেরা করোনা ইউনিট থেকে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। ১৯৫১ সালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল কাদের। তার পিতার নাম আবদুল জলিল, মাতা আনোয়ারা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন আবদুল কাদের।
সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছিলেন তিনি। ১৯৭৯ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘বাটা’-তে যোগ দেন আবদুল কাদের। ৩৫ বছর এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই নাটকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আবদুল কাদের। ঢাবি মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যও ছিলেন কাদের।
১৯৭২ সালে টেলিভিশন নাটকে অভিষেক হয় আবদুল কাদেরের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে প্রথমবার অভিনয় করেন তিনি। আবদুল কাদের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। ছোটপর্দা, বিজ্ঞাপন এবং বড়পর্দা- তিন মাধ্যমেই সমান জনপ্রিয় তিনি। টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন কাদের।
মঞ্চে ৩০টি প্রযোজনার এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা। এছাড়া সিনেমা এবং বেশকিছু বিজ্ঞাপনেও দেখা গেছে তাকে। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘দুলাভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকআপ’, ‘ঢুলি বাড়ি’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’।